শুভজিত বিশ্বাস – পেশায় শিক্ষক ও নেশায় শখের লেখক
সময় – সময়ের সঙ্গে কেউ কোনোদিন পাল্লা দিতে পারে নি! হয়তো কোনোদিন পারবেও না! সব পাল্টে যায়! মুছে যায়!
কিন্তু তবু কিছু বিষয় এমনও থাকে যা হয়তো বহমান সময়ের উদ্দাম দুর্বার ঢেউ এ ভেসে যায় না! কালের কবলে পড়েও মুছে যায় না তাঁর চিহ্ন! অন্তত আমার ত তাই মনেহয়! কিভাবে? সে- কথাই না হয় বলবো এখন দু-এক লাইনে। সেই যে একটা সময় ছিল যখন লোকে বিনোদন থেকে উপহার সবেতেই একমাত্র বুঝত ‘বই’! সেই সময় হয়তো সাধ করে কেউ তাঁর প্ৰিয় মানুষকে দিয়ে ছিলেন ‘ওকে’! হ্যাঁ, ওঁর এখন কোনো নাম নেই! নেই কোনো সৌন্দর্য বা সুশ্রীভাব! একদিন এক ফেরিওলার গাড়িতে প্রথম দেখলাম ওকে। একটা রঙচটা বস্তার তলা থেকে উঁকি মারছে! হাতে তুলে নিলাম! দেখলাম সামনের মলাটসহ আস্ত সুচিপত্রটাই হাওয়া হয়ে গিয়েছে এখন! বুঝলাম, যার বই ছিল ওটা এখন তাঁর কাছে বোঝা! ফলে তিনি তাই হয়তো নির্দ্বিধায় ওকে এতে চালান করেছেন, খোলা বাদামের ঠোঙার উপকরণের জন্য!
আমার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল! অনেক দিন থেকেই আমার মন টানছিল একটা ভালো বাংলা-বই এর জন্য, কিন্তু পকেটের টানের জন্য – আর সেই ডাকে সাড়া দেওয়া হয়ে ওঠেনি। যা দাম এখন বইয়ের তাতে আমার মত নিম্ন- মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে আর……………
যাক দরদাম করে ১২ টাকার বিনিময়ে কিনেই নিলাম ওকে! এবার মনটা বেশ খুশি-খুশি লাগলো! আমাদের যে কেবল ঐ টুকুই সম্বল!! দুপুরে মাছ-ভাত খেয়ে খুলে বসলাম বইটা! হলদে বিবর্ণ পাতার ওপর চোখে পড়লো প্রথম গল্পটা – “চাউল”, পড়তে শুরু করলাম। কখন যে তলিয়ে গেলাম গল্পে, বিভূতিবাবুর মায়ার স্পর্শে, তা আমার আর মনে নেই! গল্পটা যখন শেষ হলো, দেখলাম আমার দুচোখ ভরে উঠেছে জলে!! মনটা কেমন অন্যরকম হয়ে গেলো! অনুভব করলাম – এই হৃদয়হীন পৃথিবীতে খিদের কাছে এক অসহায় পিতার আত্মসমর্পণ, একটা ব্যর্থতার করুন কাহিনীর কথাই যেন আমার বুকে করুন রাগিনী হয়ে বেজে চলতে লাগলো অনর্গল! দুমুঠো চাল মানুষের জীবনকে যে এভাবে ওলোট-পালট করে দিতে পারে, তা সত্যি আমার অজানা ছিল!
সেই গল্পের ছোট্ট ‘থুপির’ মত – আজও হয়তো কত থুপিরা শৈশবেই হারিয়ে ফেলে তাঁদের বাবা – মা পরিবারকে! খিদের জন্যে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দুহাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরতে চায় ‘চাল! ভাতের চাল’!
জানিনা যারা ওদের বঞ্চিত করে – তাঁরা যখন ভাতের থালার সামনে বসে তখন ওদের কথা কি একবার ও ভাবেন? তাঁরা হয়তো আজও জানে না – ‘চাউল’ আজও ভাত হয়ে ফুটে ওঠে সমাজের হাড়িতে ওদেরই চোখের জলে!
হয়তো! হয়তো বা!!
এই গল্পের শেষে আমার উপলব্ধি – সে চাউল কেবল শুধুই মানুষের খুদা বাড়ায়! কিন্তু তা নিবৃত্তি করতে পারে নি! পারে না!
ধন্যবাদ!!
#bookreview #বিভূতিভূষণেরসেরাগল্পপাঠ অভিজ্ঞতা #বিভূতিভূষণেরসেরাগল্প #পাঠঅভিজ্ঞতা #বিভূতিভূষণেরসেরাগল্পরিভিউ #রিভিউ #বিভূতিভূষণবন্দ্যোপাধ্যায়এরজীবনী #Review #বাংলাউপন্যাসদর্শন
3 Responses
চাউলের পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়লাম। আর তাতেই গল্পটা পড়ে ফেলার আগ্রহ জন্মালো। সুতরাং বলা চলে যে, পাঠ প্রতিক্রিয়া নিজ কর্মে সফল হয়েছে। শুধু একটা অনুরোধ রাখব সমালোচক হিসেবে। বাংলা ভাষার এই অবক্ষয়ের কালে আমরা যারা বই পড়ি, বাংলা নিয়ে ভাবি তারা লেখার সময় আরেকটু সচেতনতা অবলম্বন করব, যাতে যতটা সম্ভব নির্ভুল বাংলা তুলে ধরা যায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ!!
Thank you so much Arpita for such a genuine comment. We will take care of it.